সারাদেশ

হরিরামপুরে আ’ লীগ সরকারের ১৫ বছরে নদী শাসনে ব্যয় ২ শত ২৯ কোটি টাকা

জ. ই. আকাশ, মানিকগঞ্জ :

মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার মধ্যে পদ্মা অধ্যুষিত অন্যতম উপজেলা হরিরামপুর । পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯ টি ইউনিয়নই পদ্মা ভাঙনকবলিত। নদীর এপার ভাঙ্গে অপার গড়ে । ঘর  বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠিান চলে গেছে নদীগর্ভে।  

সত্তর দশকের মাঝামাঝির দিকে  তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে আজিমনগর, সুতালড়ী লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে আশির দশকের গোড়ার দিকে বিলীন হওয়া তিনটি ইউনিয়নেরই চর জেগে উঠলে পর্যায়ক্রমে সেখান জনবসতী শুরু হয়। নদী ভাঙনের ফলে ভৌগলিকভাবে উপজেলা সদরের সাথে তিনটি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন  হয়ে যায়।

হরিরামপুরের এই পদ্মা ভাঙনরোধে ইতিপূর্বে তেমন  কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হলেও বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এ উপজেলায় নদী শাসনের কাজে ব্যয় করা হয়েছে ২ শত ২৯  কোটি টাকা ।যার ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।

মানিকগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের প্রকল্প প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ফ্লাড এন্ড রিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (পর্যায়-১) প্রকল্প এর আওতায় ১২৫ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৮.৮ কিঃমিঃ, ২০২১-২০২৩ অর্থ বছরে জেলার বাচামারা, বাহাদুরপুর ও ধুলসুরা এলাকা নদীভাঙ্গন হতে রক্ষাকরণ”প্রকল্প এর আওতায় উপজেলার ধুলশুড়া ও গোপীনাথপুর এলাকায় ৩৫.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও-ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়।

 ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ফ্লাড এন্ডরিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (পর্যায়-২) প্রকল্পের আওতায় ৫২  কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকায় ৪  কিঃমিঃ, ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ অর্থ বছরে বন্যা মৌসুমে উপজেলার কাঞ্চনপুর, গোপীনাথপুর, ধুলসুরা, লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর ও সুতালড়ি ইউনিয়ন এলাকায় ১৭কোটি টাকা ব্যয়ে ৬.৫০ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য জিও-ব্যাগ ডাম্পিং এর মাধ্যমে জরুরী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়।

এর মধ্যে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়ন লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর ও সুতালড়ি ইউনিয়নে গত ৩/৪ বছর আগে তীব্র ভাঙন দেখা দিলে ভিটে বাড়ি, জমি জমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাধিকভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়। এতে করে জরুরি ভিত্তিতে চরাঞ্চল রক্ষায়  তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ২০২৩/২৪ অর্থ বছরে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২০০ মিটার জিও ব্যাগ ডাপিং করা হয়।

এছাড়াও ফ্লাড এন্ডরিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (পর্যায়-২) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার হারুকান্দি ও কাঞ্চনপুর এলাকায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪.৭০০কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য পদ্মা নদীর বাম তীরে জিও-ব্যাগ ডাম্পিংএর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যা চলতি মাসের শেষের দিকে শেষ হবে  এবং একই প্রকল্পের আওতায় ২০২৩/২৪ অর্থ বছরে ধুলশুড়া এলাকার উজানে ৩.০০ কিঃমিঃ অংশে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর বাম তীরে জিও-ব্যাগ ডাম্পিং এর কাজ আগামী  ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিক থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও ৬৪ জেলার অভ্যন্তরে ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় ১৯ কি. মি. দৈর্ঘ্য  ইছামতি নদী পুনঃখনন করা হয়।

নদী শাসনের ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও  সুতালড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলজার হোসেন বাচ্চু বলেন, বর্তমান আ’ লীগ সরকারের ১৫ বছরেই নদী শাসনের কাজ হয়েছে। আগের কোনো সরকার হরিরামপুর রক্ষায় কোনো কাজই করেনি। আমাদের সাংসদ মমতাজ বেগম এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এড গোলাম মহীউদ্দীনের সর্বাত্নক প্রচেষ্টায় জননেত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপেই আজ হরিরামপুরের টিকে আছে। চরাঞ্চল ভাঙবে, গড়বে এটাই স্বাভাবিক। চরাঞ্চল ভাঙনের কোনো বরাদ্দ সরকারের নেই। তারপরেও মমতাজ বেগমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চরাঞ্চলেও কিন্তু এ বছর নদী শাসনের কাজও হয়েছে। সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ১২০০ মিটার ডাম্পিং করা হয়েছে। এই আ’লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরে হরিরামপুরে বিভিন্ন সেক্টর মিলে বলতে গেলে প্রায় হাজার কোটি টাকার ওপরে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে এবং অনেক প্রকল্প এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরপর বিদ্যুৎ তো শতভাগ হয়েছেই। তাই উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নৌকা প্রতীকে নিয়ে যিনিই আসুক তারপক্ষে কাজ করে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে।

মানিকগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন জানান, “মানিকগঞ্জ-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য  মমতাজ বেগম হরিরামপুরের নদীভাঙ্গন রোধকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে একাধিকবার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, মাননীয় উপ-মন্ত্রী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মহোদয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়াও তিনি নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিক ডিও পত্র পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। তারই ফলশ্রুতিতে বিগত ২০০৯ হতে ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে হরিরামপুর ৯টি ইউনিয়নের পদ্মার পাড়ে নদীভাঙ্গন রোধে প্রায় ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১.১২৫কিঃমিঃ নদীতীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।

এছাড়াও চলতি মাসের ২০ তারিখ হতে হারুকান্দি এলাকায় ৩.৭৭২ কিঃমিঃ এবং আগামী ১ মাসের মধ্যে গোপীনাথপুর এলাকায় আরও ১.০০ কিঃমিঃ নদীতীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়িত হবে।  স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের নির্দেশনায় পুরো হরিরামপুর উপজেলাকে নদীভাঙ্গন মুক্ত করার লক্ষ্যে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

বিডি নিউজ পোষ্ট/সং-১৫/বিডি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button