সারাদেশ

হরিরামপুরের চরাঞ্চল উন্নয়নে আ’ লীগ সরকারের ১৫ বছরে ব্যয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা

জ. ই. আকাশ (মানিকগঞ্জ) :

মানিকগঞ্জের পদ্মা অধ্যুষিত অন্যতম উপজেলা হরিরামপুর। পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নই পদ্মা ভাঙনকবলিত।

এতে করে পদ্মার তীব্র ভাঙনের কবলে আজিমনগর, সুতালড়ী লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে আশির দশকের গোড়ার দিকে বিলীন হওয়া তিনটি ইউনিয়নেরই চর জেগে উঠায় পর্যায়ক্রমে সেখান জনবসতী গড়ে ওঠে। নদী ভাঙনের ফলে ভৌগলিকভাবে দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে তিনটি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে চরাঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটায় উপজেলার অর্থনীতিতে চরাঞ্চল ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চরাঞ্চলে তিনটি ইউনিয়নে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজারের অধিক জনগণের বসবাস।

হরিরামপুরের এই চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিগত দিনে তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া নজরে না পরলেও আ’লীগ সরকারের ১৫ বছেরে উপজেলার চরাঞ্চলের উন্নয়নে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে বিভিন্ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুর্গম চরাঞ্চল আজিমনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর বাজার সংলগ্ন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে চরাঞ্চলের অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুর্নবাসনের লক্ষে একক গৃহনির্মাণ, আশ্রয়ণ-২ (৪র্থ পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ৭৫টি পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২ কোটি ১৭ লক্ষ ১২ হাজার ৫ শো টাকা ব্যয়ে এই আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে। লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ২২,৯৯,৫০৫ টাকা ব্যয়ে নটাখোলা খালে এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩২,৪১,৪৩৬ টাকা ব্যয়ে গঙ্গাধরদি খালের ওপর ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১ কোটি ৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে দুটি রাস্তায় ২ হাজার মিটার রাস্তা এইচবিবি করণ করা হয়।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে একতলা ভবন (চারতলা ফাউন্ডেশন) নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১ কোটি ২৩ লাখ  ৫০ হাজার বরাদ্দে পুনরায় একতলা ভবনটির ওপরে আরো তিনতলা ভবন নির্মাণাধীনকালে ২০২২ সালে নদী ভাঙনের কবলে পুরো ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের নটাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৮/১৯ অর্থবছরে  ৬৬  লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে একতলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর ২০২১/২২ অর্থ বছের ওই বিদ্যালয়েরই একতলা ভবনের ওপর  ৮০ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ২টি তলা নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি তৃতীয় তলায় রূপ নেয়। একই অর্থ বছরে ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় নির্মাণ করা নটাখোলা তদন্ত কেন্দ্র (পুলিশ ফাঁড়ি)। এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১ কোটি ৬৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা বরাদ্দে নির্মিত হয় লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স। ২০১২ সালে ১৭ লক্ষ ৪২ হাজার টাকায় সেলিমপুর প্রাথমিক বিদ্যসলয় ও ২০১৩ সালে ২৬ লক্ষ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় হরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

চরাঞ্চলের সুতালড়ী ইউনিয়নে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৯১ লক্ষ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সুতালড়ী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স। এছাড়াও সুতালড়ী ও আজিমনগরে মসজিদ, মন্দির ও কবরস্থান উন্নয়নে বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ লক্ষাধিক। চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১২০০ মিটার নদী শাসনে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তবে এ রিপোর্টে অনেক তথ্য সংযোজনও সম্ভব হয়ে উঠেনি।

চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের উন্নয়ন সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আব্দুর রব  জানান, “বিগত ১৫ বছর আগের চরাঞ্চল আর বর্তমানের চরাঞ্চল কিন্তু এক নয়। আগে কি ছিল আর বর্তমানে কি আছে সবই কিন্তু দ্বাদৃশ্য। চরাঞ্চল রক্ষায় এই প্রথম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এড. গোলাম মহীউদ্দীন এঁর প্রচেষ্টায় সেলিমপুর ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সার্বিক সহযোগিতায় আজিমনগর ও সুতালড়ীতে ডাম্পিং এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য উন্নয়ন দৃশ্যমান। যারা চরাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন, তাদের মূলত চরাঞ্চলে যাতায়াত নেই। চরাঞ্চলের উন্নয়ন সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। চরাঞ্চলের আজ যে উন্নয়নে দৃশ্যমান রয়েছে, এটা সম্পূর্ণ জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারেরই অবদান।”

বিডি নিউজ পোষ্ট/সং-১৮/বিডি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button